বেলা ৪:০০টায় প্রখ্যাত লেখক সিকান্দার আবু জাফর স্মরণে আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। স্মৃতিচারণ করেন মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন, অধ্যাপক আবুবকর সিদ্দিক এবং অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, সাহিত্যিক হিসেবে সিকান্দার আবু জাফর যতোটা প্রসিদ্ধ ছিলেন তারচেয়ে বেশি ছিলেন একজন পত্রিকা সম্পাদক হিসেবে। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সিকান্দার আবু জাফর বিশাল অধ্যায় রচনা করেছেন। আমরা যে মুক্তবুদ্ধির স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি তারমূলে ছিল তাঁর কণ্ঠস্বর এবং তাঁর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকার নানা উদ্দীপনামূলক নিবন্ধ। সাহিত্যাঙ্গণে তিনি ছিলেন একজন কৃতি পুরুষ।
কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ বলেন, নজরুলের পরে সিকান্দার আবু জাফর ছিলেন নজরুল চরিত্রের দ্বিতীয় একজন। শুধু স্বাধীনতা সংগ্রাম নয় তাঁর রচিত গান বাঙালির সকল মুক্তির সংগ্রামেই প্রেরণা যুগিয়েছে। বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ এবং সাহসী সম্পাদক সিকান্দার আবু জাফর সময় দ্বারা আন্দোলিত হয়েছিলেন এবং তাঁর লেখার মাধ্যমে জনসাধারণকে উজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাঁর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকা বাঙালি জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এ পত্রিকার মাধ্যমে নবীন লেখকেরা দাঁড়াতে শিখেছে। তিনি বলেন, বাংলা সাহিত্যের উন্নত ধারায় যেসব গুণীসাহিত্যিকের কথা স্মরণে আসে তাঁদের মধ্যে সিকান্দার আবু জাফর অন্যতম। তিনি আমাদের সাহিত্যাঙ্গণের ভিত রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ব্যক্তিজীবনে দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও সিকান্দার আবু জাফর ছিলেন চরম উদ্যমী একজন মানুষ। তাঁর চরিত্রের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল দেশপ্রেম। তিনি ছিলেন আমাদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক।
অধ্যাপক আবুবকর সিদ্দিক বলেন, দৃপ্ত কণ্ঠের অধিকারী সিকান্দার আবু জাফর এমন একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন যেখানে লেখার জন্যে তৎকালীন তরুণ লেখকেরা স্বপ্ন দেখত। তাঁর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকা আমাদের নবীন সাহিত্যিকদের প্রচ্ছন্ন প্রভাব ফেলে। তিনি অনেক লেখক তৈরি করেছেন যারা আজ সাহিত্যাঙ্গণে খুবই পরিচিত।
মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন বলেন, সিকান্দার আবু জাফর ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। তিনি তাঁর সমকাল পত্রিকা ব্যবহার করতেন দেশ ও জাতির কল্যাণে।
সভাপতির ভাষণে বাংলা একাডেমীর সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বলেন, যাঁদের স্মৃতি আমাদের উদ্বেলিত করে তাঁদের মধ্যে সিকান্দার আবু জাফর অন্যতম। আদ্যোপান্ত বাঙালি সিকান্দার আবু জাফর ছিলেন স্বাধীনতার জন্যে উদগ্রীব একজন মানুষ। সমকাল পত্রিকায় তিনি সময়োপযোগী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ছিলেন অবিশ্বাস্য সাহসের অধিকারী একজন মানুষ যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর রচিত ‘বাঙলা ছাড়ো’ কবিতায়।
অনুষ্ঠানে সিকান্দার আবু জাফর রচিত ‘বাঙলা ছাড়ো’ কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার জনাব শাহাদাত হোসেন নিপু, ‘আমাদের সংগ্রাম চলছে চলবে’ শীর্ষক গণসংগীত পরিবেশন করে ‘জাগরণ’ শিল্পীগোষ্ঠী।
