বাংলা কালচার ডট কম: বাংলা একাডেমী আয়োজিত দু’দিনব্যাপী ‘বাংলা ব্যাকরণ প্রণয়ন’ শীর্ষক এক কর্মশালার  ২রা ভাদ্র ১৪১৬/ ১৭ই আগস্ট ২০০৯ শেষ দিন। সকাল ৯:৩০টায় নিবন্ধনের মাধ্যমে কর্মশালার কার্যক্রম শুরু হয়। কর্মশালায় ‘বাংলা ব্যাকরণের রূপরেখা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক পবিত্র সরকার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুজ্জামান। আলোচনা করেন বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মনসুর মুসা, অধ্যাপক জীনাত ইমতিয়াজ আলী এবং অধ্যাপক দানিউল হক। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইউম। সমাপনী ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
প্রাবন্ধিক অধ্যাপক পবিত্র সরকার বলেন, মান্য চলিত বাংলাভাষা কীভাবে কাজ করে, তার উচ্চারণস্তর থেকে বাক্যগঠন ও বাক্যপরিবর্তন বা সংবর্তনের নিয়মগুলি কী কী, তারই একটি সুবিন্যস্ত, ভাষাবিজ্ঞানসম্মত সংকলন করা জরুরি। খাঁটি বাংলা ব্যাকরণে ভাষার নানা নিরুক্তির উৎকেন্দ্রিক বিস্তারকে যথাসম্ভব কমিয়ে এনে মান্যভাষার একটি আদর্শ সংহত রূপ নির্মাণের চেষ্টা করতে হবে। বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলায় যাঁরা বাংলা ব্যাকরণের কাঠামো নির্মাণের কাজ করছেন তাঁদের মতামতও যদি আমরা গ্রহণ করতে পারি তাহলে ব্যাকরণটি আরও সমৃদ্ধ হবে। তিনি বলেন, আমি ভরসা পাচ্ছি যে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীগণ এ ধরনের একটি বিশাল ব্যাকরণ প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছেন। ঢাকার বাংলা একাডেমীর নেতৃত্বে এই কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন হবে বলে আমার বিশ্বাস।
প্রাবন্ধিক অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ব্যাকরণের সকল স্তরে এমনকি অর্থসহ বাক্যতত্তে¡ও নির্দেশচিহ্ন নিষেধাত্মক রূপ ও শব্দের যে নিয়মিত সংস্থান যাকে পদক্রমও বলা যায় সবকিছুই কোনও মডেল দেখে নির্ধারণ করা ঠিক নয়। বাংলা ব্যাকরণকে তার নিজস্ব পথে, নিজস্ব নিয়মে এগুতে দেওয়া উচিত। এেেত্র বহুভাষাজ্ঞান ও তার ব্যাকরণজ্ঞান আমাদের সহায়ক হতে পারে।
অধ্যাপক মনসুর মুসা বলেন, ভাষা একটি ব্যাপক বিষয়। এটা বিভিন্ন জন বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেছেন। বর্তমানে যে ব্যাকরণ প্রচলিত রয়েছে তা উপাত্তবিহীন। তাই এই ব্যাকরণ রচনা করার জন্য প্রয়োজনীয় বাংলা উপাত্তভাণ্ডার তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, এতদিনের পুরোনো ভাষার জন্য একটি ব্যাকরণই যথেষ্ট নয়। এর জন্য একাধিক ব্যাকরণ রচনার পাশাপাশি ুদ্র জাতিসত্তার জন্যও ব্যাকরণ রচনা করতে হবে।
অধ্যাপক জীনাত ইমতিয়াজ আলী বলেন, বাংলা ভাষা যেভাবে আছে তার একটি বিবরণ নতুন ব্যাকরণে সন্নিবেশ করতে হবে। ধ্বনিতত্তে¡র ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনার পাশাপাশি বর্ণ ও ধ্বনিতত্তে¡র অবস্থান নিরূপণ করে বাংলা বর্ণমালায় ব্যবহৃত সকল বর্ণ ও তার অবয়বকে অূণœ রেখে ব্যবহার পুনর্নিধারণ করতে হবে।
অধ্যাপক দানিউল হক বলেন, ভাষার অন্তর্শৃঙ্খলা উদ্ধার করার একটি দলিল হিসেবে এই ব্যাকরণ রচনা করতে হবে। বাংলা ব্যাকরণ রচনার েেত্র ক্রিয়াপদের উপর বিশেষ ল্য রাখতে হবে এবং ব্যাকরণটি হবে সহজবোধ্য।
কর্মশালায় মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ড. আবুল কাসেম, ড. সুকোমল বড়–য়া, ড. বিমান বড়–য়া, জনাব ওবায়দুল ইসলাম, ড. সৌরভ সিকদার, অসীম সাহা, ড. তপোতী সরকার এবং ড. অসীম সরকার। মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, ব্যাকরণ প্রণয়নের জন্য বাংলা ভাষার পরিবর্তনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। ধ্বনিতত্ত¡, রূপতত্ত¡ ও বাক্যতত্তে¡র প্রতি যথেষ্ট যতœবান হয়ে একটি সুন্দর ব্যাকরণ রচনা করতে হবে। এবং এর জন্য প্রয়োজন একটি ভাষা গবেষণা সেল তৈরি করা।
সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইউম বলেন, ব্যাকরণ রচনার েেত্র সংস্কৃত শব্দকে দুরে ঠেলে না দিয়ে বরং প্রয়োজনীয় শব্দ সঞ্চয়ন করতে হবে। স্বচ্ছ পরিভাষা নির্ণয় করে সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটি খাঁটি বাংলা ব্যাকরণ প্রণয়ন করা দরকার।
সমাপনী ভাষণে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা ব্যাকরণ প্রণয়নের ল্েয এই কর্মশালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা পশ্চিম বাংলায়ও একটি কর্মশালা আয়োজন করব। এতে আমাদের দেশের ভাষাবিশেষজ্ঞরাও যোগদান করবেন। দু’টি কর্মশালায় দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সুচিন্তিত সুপারিশমালা বিবেচনায় রেখে বাংলা একাডেমী বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থটি রচনা করবে।

কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স ৫৭তম ব্যাচের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
আগামীকাল ১৮ই আগস্ট ২০০৯ মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় একাডেমীর সেমিনার কে বাংলা একাডেমী পরিচালিত কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ৫৭তম ব্যাচের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধন করবেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।